কুষ্টিয়া: ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতেন মানুষের জন্য কিছু করার। ইচ্ছে ছিল নিজের সামর্থ্যের মধ্যে যা সম্ভব, তাই দিয়েই সমাজের অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াবেন। তবে শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যাননি, সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য অবিরাম কাজ করেছেন এবং এখনও কাজ করে চলেছেন এই তরুন ও তার সংগঠন। বলছিলাম কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার তরুণ ‘স্মাইল ইন লাইফ’ সংগঠনের সাধারন সম্পাদক মোঃ বাপ্পীর কথা।
অসহায় মানুষদের স্বপ্ন পূরণের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন মো: বাপ্পী ও তাদের সংগঠন। তার এই উদ্যোগে উপকার ভোগ করেছেন সমাজের অসংখ্য মানুষ। আগ্রহী শিক্ষার্থীরা সমাজসেবায় নিজেকে যুক্ত করার সুযোগ পেয়েছেন এ সংগঠনে। বাপ্পী তার এই উদ্যোগের মাধ্যমে সমাজে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের ধারা আনতে চান।
বাপ্পী সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর ভবিষ্যৎকে বানিয়েছেন নিজের স্বপ্ন। আর সেই অধরা স্বপ্নকে ছুঁয়ে দেখার বাসনা থেকেই আসিফ ইকবাল ও মোঃ বাপ্পী প্রতিষ্ঠা করেন একটি সংগঠন। নাম দিয়েছেন ‘স্মাইল ইন লাইফ’। নামের মাঝেই যেন কাজের উদ্দেশ্যের প্রতিফলন ঘটেছে। এছাড়াও কুষ্টিয়া জেলার প্রান্তিক মানুষের জীবন মান উন্নয়নে যা তৃণমূল পর্যায়ে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের আমল পরিবর্তন এনেছে।
মানবিক উন্নয়নের মাঝে রয়েছে, অসহায় নারী ও সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের কল্যাণে কাজ করা, শিশুদের শিক্ষাদানের পাশাপাশি নতুন নতুন পোশাক প্রদান, শীতবস্ত্র বিতরণ, ঈদের সময় ঈদ সামগ্রী বিতরণসহ, গৃহহীনদের ঘর করে দেয়া, কৃষকের বিশুদ্ধ পানির চাহিদা মেটাতে মাঠের মাঝে, বিভিন্ন মসজিদ, মাদরাসা, রাস্তার মোড়ে মােড়ে ও কবরস্থান, মন্দিরে নলকূপ স্থাপন এবং অসহায় মানুষের বাড়িতে ওয়ান ড্রপ ওয়াটার নামক প্রকল্পের মাধ্যমে বিশুদ্ধ পানির ব্যাবস্থা করা। প্রান্তি তৃণমুলের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছে বাপ্পি। এছাড়াও বিভিন্ন সহযোগি সংগঠনের সহযোগিতায় ও সদস্যদের উচ্ছিক অনুদানে সমাজের অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন তিনি।
বাপ্পীর এই ‘স্মাইল ইন লাইফ’ সংস্থাকে নারী উদ্যোগ কেন্দ্র (নউক) ফুটস্টেপ্স, ও রাইনার এর্বাট ছোট ছোট সহযোগিতা করে থাকে। বাপ্পী রাজধানীতে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন। বাপ্পীর নেতৃত্বে এলাকার তরুণ যুবকদের উদ্বুদ্ধকরণ ও সমাজ উন্নয়নে কাজ করছে কিছু উদ্যোমী যুবক।
করোনার শুরু থেকে এ পর্যন্ত প্রায় এক হাজার পরিবারকে তার পক্ষ থেকে খাদ্য ও অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। মিরপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ১০ হাজার মাস্ক বিতরণ, আরও এক হাজার মানুষের মাঝে হ্যান্ড সেনিটাইজার, শতাধিক করোনায় আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের মাধ্যমে সেবা প্রদান কারর পাশাপাশি করোনায় আক্রান্ত জটিল রোগীকে হাসপাতালে পৌছে দেওয়াসহ প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তিক পরিবারের মাঝে ফাষ্টএইড বক্স প্রদান করেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের হুইল চেয়ার প্রদান, কর্মক্ষম মানুষের আয়ের পথ সৃষ্টির জন্য হাঁস-মুরগি, ছাগল বিতরণ, সেলাই মেশিন প্রদানের কাজও করেছেন বাপ্পী ও তার সংগঠন।
অদম্য মেধাবী কাজপাগল এ তরুণের মাধ্যমে অনেক অসহায় গরিব মানুষগুলি আলোর পথে। আগামী দিনে বাপ্পী একটি কম্পিটার ইনসটিটিউট সহ, একটি প্রাথমিক সেবা কেন্দ্র স্থাপন করতে চায়। আর সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষের কাছে তরুন উদ্যোগী বাপ্পী একটি মানবদরদী হয়ে উঠেছেন।
‘স্মাইল ইন লাইফ’ এর সাধারন সম্পাদক বাপ্পী বলেন, এ পর্যন্ত দুইশটিরও বেশি ইভেন্ট আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি, আমাদের সংগঠনের চেয়ারম্যান এর সার্বিক সহযোগিতায় দীক্ষালয় নামে আমরা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করছি যেখানে গ্রামের শিশুরা পঞ্চম শ্রেণি অবদী বিনামূল্যে লেখাপড়া করেন। আমাদের এই দীক্ষালয় নামক প্রথমিক স্কুল টি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ করকারের তালিকাভুক্ত। আরও বেশ কিছু ইভেন্ট চলমান রয়েছে। আমাদের সংগঠনের সব সদস্যই শিক্ষার্থী। আমরা ইতি মধ্য বিগত তিন বছর যাবৎ এককালিন বৃত্তি প্রদান করে আসছি এ বছর ব্রামহ্মবাড়িয়া তে প্রায় তিন হাজার শিক্ষার্থী তিন টি উপজেলা বৃত্তি পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করেন। আমরা এক হাজার ছাত্র/ছাত্রী কে এককালিন এ বৃত্তি প্রতি বছরের ন্যায় প্রদান করে আসছি। সমাজের সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক অসহায় মানুষের স্বপ্ন পূরণই আমাদের কাজের লক্ষ্য।
তিনি বলেন, মিরপুর উপজেলায় দরিদ্র অসহায় পরিবারের বিশুদ্ধ পানির জন্য যৌথ উদ্যোগে ১৮০ টা নলকূপ স্থাপন, স্বাবলম্বী করতে অসহায় ৬ জনকে অটোরিকশা-ভ্যান প্রদান, স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য বিশুদ্ধ খাওয়ার পানির জন্য ২ টি টাওয়ার স্থাপন করেছে।
বাড়ীতে টিউবওয়েল না থাকায় বহুদিন ধরে আম্বিয়া বেগমের খাবার পানির কষ্ট ছিল। বাড়ী থেকে খানিকটা দুরে গিয়ে অন্যের বাড়ি থেকে প্রতিদিন খাবার পানি আনতে হতো তাকে। বিষয়টি স্থানীয় কারও নজরে না এলেও, এসেছে স্মাইল ইন লাইফের মো: বাপ্পীর। তিনি বিষয়টির সত্যতা জানার পর আম্বিয়া বেগমকে একটি টিউবওয়েল উপহার দিয়েছেন। আর এই টিউবওয়েল পেয়ে আনন্দে আত্মহারা আবিয়া বেগম। বাপ্পীর উপহারের মাধ্যমে এতদিনের কষ্ট লাঘব হলো তার।
বাপ্পী বলে উঠেন, যখন কাউকে সহযোগিতা করতে পারি। যেমন অসহায় রোগীর চিকিৎসা, প্রতিবন্ধী কে হুইল চেয়ার বিতরন, একটি ভ্যান কিনে দেওয়া ইত্যাদি কাজ করতে পারি, গৃহহীনকে ঘর করে দেওয়া, মাঠের মাঝে কৃষকের জন্য পানির টিউবওয়েল এর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, কারও অর্থের ব্যবস্থা করা, কাউকে একটি একটি রিকশা বা দোকান করে দিলেই কিছুটা স্বাবলম্বী হতে পারে। এমন সব কাজগুলো করতে পারলে মনের ভেতরে একটা ভালো লাগা কাজ করে। এই অনুভূতি আসলে কাউকে বোঝানোর মতো নয়। তখন আমার কাছে মনে হয় এটিই আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন, বড় সাফল্য। একটা মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে পারলে মনে হয় আমি পুরো বিশ্বকে জয় করে ফেলেছি। তবে খ্যাতি কিংবা নামের জন্য নয়, একমাত্র মানুষের জন্য কিছু করার প্রয়াস থেকেই এই কাজগুলো করে আসছি। ভবিষ্যতেও করে যেতে চাই। চাকরি করেও যে ভাল কাজ করা যায় সেই কাজটিই আমি করতে চায়, যতদিন আল্লাহ বাঁচিয়ে রাখেন।
সংগঠনের সাথে কাজ করা স্থানীয় যুবক বিপুল হোসেন জানান, বাপ্পী তার সংগঠন স্মাইল ইন লাইফের মাধ্যমে বিভিন্ন সামাজিক ও মানবিক কর্মকাণ্ডের মধ্যদিয়ে প্রশংসা কুড়িয়ে চলেছেন প্রতিনিয়ত। তার মাধ্যমে অনেক অসহায় পরিবার টিউবওয়েল থেকে শুরু করে নানাবিধ সহায়তা পেয়েছেন। সমাজের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো ইচ্ছেশক্তি থাকায় বাপ্পীর প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেন তিনি।