তারিকুল হক তারিক
মচমচে দানাদার স্বুসাদু মজা এরই নাম কুষ্টিয়ার বিখ্যাত তিলের খাজা। কুষ্টিয়ায় তৈরী হলেও এই তিলের খাজার সমাদার এখন দেশব্যাপী। শুধুমাত্র চিনি, তিল,দুধ ও পনি দিয়ে তৈরী করা হয় মজাদার সুস্বাধু এই মচমচে মিষ্টি তিলের খাজা।
প্রায় ৪০ বছর ধরে কুষ্টিয়া শহরের মিলপাড়া এলাকার মিলবাজার রেলগেট সংলগ্ন স্থানের একটি বাড়ীতে ১০-১৫ জন মানুষের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে কোন রকম মেশিন ছাড়াই শুধুমাত্র হাতের পরশে তৈরী হয়ে আসছে মজাদার মিষ্টান্ন তিলের খাজা।
এই তিলের খাজা দেখলে বিশ্বাস করার উপায় নেই যে এটা কোন রকম মেশিন ছাড়া তৈরি করা সম্ভব। আবার না দেখলেও বিশ্বাস করা যায় না যে মেশিন ছাড়া শুধুমাত্র হাতের ছোঁয়া দিয়ে কি-নিপুনভাবে তৈরী করা হয় এই তিলের খাজা।
কুষ্টিয়ার এই তিলের খাজার প্রধান দুই কারিগর সারোয়ার ও তানজেল। তারা জানান,এখন গরমের সময় তিলের খাজার জন্য অফ সিজেন। তবুও প্রতিদিন এখন ৫০ থেকে ৬০ কেজি খাজা তৈরী করা হচ্ছে এবং তা খুচরা বিক্রেতাসহ পাইকারিরা দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচেছ। শীতের সময় ফুল সিজেনে প্রতিদিন এখানে ২০০ থেকে ২৫০ কেজি খাজা তৈরী হয়। তারা জানান,এই খাজা তৈরীতে প্রতিদিন ১০ থেকে ১৫ জন মানুষের প্রয়োজন হয়। এর মধ্যে চুলা জালাতে পাক মিস্ত্রি ২ জন,এরপর হরিণের সিং-এর মতো একটি কাঠের বস্তুর উপর থেকে জ্বালানো চিনির আঠালো অংশ টানতে সিং মিস্ত্রি ২ জন এর উপর উঠে আঠালো টেনে লম্বা করতে কট মিস্ত্রি ২ জন ,এরপর আসল কারিসমা যার হাতে সেই ভাজ মিস্ত্রি ২ জন। খাজা কাটা মিস্ত্রি ১ জন এবং খাজার সাথে তিল মেশানো এবং তা প্যাকেটজাত করার জন্য আরো ৫ থেকে ৭ জন প্রয়োজন হয়।
কুষ্টিয়ার বিক্ষাত এই তিলের খাজার প্রতিষ্ঠাতা মালিক আব্দুল মজিদ ও শওকত আলী জানান,গত ৪০ বছর ধরে তারা সুনামের সাথে এই ব্যবসা করে আসছেন। এখানে একক কোন মালিক নেই এখানে যারা কাজ করেন তারা সকলেই মালিক সকলেই শ্রমিক। যে কারনে তারা এই খাজা কোম্পানীর নাম দিযেছেন ভাই ভ্ইা তিলের খাজা। লাভ লোকসান সকলেই সমান ভাগ করে নেন।
তিলের খাজার প্রস্তত প্রণালী সম্পর্কে তারা জানান, চিনি, তিল,তরল দুধ এবং পরিমান মতো পানি দিয়ে বড় কড়াইতে করে আগুনে জ্বালানোর পর তা এক পর্যায়ে গাম আঠার মতো রূপ ধারন করে।এরপর ওই আঠালো জিনিসটি কড়াই থেকে নামিয়ে হরিণের সিং-এর মতো কাঠের বস্তুর সাথে ঝুলিয়ে টানতে হবে।এক সময়ে লাল বর্ণের ওই গাম আঠার মতো চিনির দলাটি সাদা রং ধারন করে।এরপর ২ জন ভাজ মিস্ত্রি হাত দিয়ে উল্টে পাল্টে টেনে লম্বা করেন এবং এক পর্যায়ে তা হাতের কারিসমা দিয়ে সুন্দর মসৃণ খাজায় রূপান্তরিত হয়। এরপর ওই খাজা টুকরো টুকরো করে কেটে পরিস্কার এবং ভাজা তিলের সাথে মিশিয়ে প্যাকেটজাত করলেই হয়ে গেল বিখ্যাত তিলের খাজা। একবার খেলে এই তিলের খাজা বার বার খেতে ইচ্ছে করবে।
প্রস্তুতকারীরা জানান,১ কেজি চিনি, ৩শ গ্রাম তিল,১শ গ্রাম তরল দুধ এবং পরিমাণ মতো পানি দিয়ে খাজা তৈরীর পর তার ওজন হয় ১ কেজি । এতে করে সব খরচ মিলে ১ কেজি খাজা বিক্রির পর লাভ হয় মাত্র ৪ থেকে ৫ টাকা।তারা জানান, প্রেম তিল নামে যে তিল দিয়ে এই খাজা তৈরী হয় তা চট্টগ্রাম অঞ্চল থেকে সংগ্রহ করতে তাদের বেশ বেগ পেতে হয় এবং খরচ পড়ে অনেক বেশি।
নিজেদের ব্যক্তিগত পুজিঁ দিয়ে এই খাজা তৈরীর প্রতিষ্ঠানটির পেছনে কোন সরকারী সহযোগীতা নেই তবে এধরনের সহযোগীতা পেলে উৎপাদনকারীরা আরো বড় পরিসরে বেশী করে এই খাজা তৈরী করতে এবং দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবেন বলে উৎপাদনকারীরা জানান্। চিনি জালানো থেকে শুরু করে পর্যায়ক্রমে ১০টি ধাপ অতিক্রম করলেই হয়ে যায় তিলের খাজা।#