• ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৪ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

বিধি ভেঙে দুই প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে লটারি, কুষ্টিয়ায় ইউপি উপনির্বাচনে ফল ড্র, মধ্যরাতে প্রার্থী-এজেন্টদের অনুপস্থিতিতে নিয়ম ভেঙে লটারি

khaskhabarbd24
প্রকাশিত মার্চ ১০, ২০২৪

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার রিফাইতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে ফলাফল ড্র হয়েছে। ভোটের লড়াইয়ে চেয়ারম্যান পদের দুই প্রার্থী সমান সংখ্যক ভোট পান। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে নিয়ম ভেঙে দুই প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে লটারি মাধ্যমে একজনকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। এনিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা সমালোচনার ঝড় উঠেছে।

প্রশ্নবিদ্ধ লটারির ফলাফল প্রত্যাক্ষান করে আজ রবিবার সংবাদ সম্মেলন করছেন মোটরসাইকেল প্রতীকের ফারুক আলম পান্না। অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করার দাবী জানিয়েছেন তিনি। সেইসাথে রিটার্নিং অফিসারের কাছে পুনরায় ভোট গননা কিংবা সঠিক আইন অনুযায়ী কার্য্য সম্পন্ন করার দাবি করেন তিনি।

চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারুক আলম পান্না বলেন, বিধি ভেঙে বৈধ প্রক্রিয়ায় লটারি করা হয়েছে। দুই প্রার্থী ও তাদের এজেন্টদের উপস্থিতিতে লটারি হওয়ার নিয়ম রয়েছে। নিয়ম মেনে সেটি করা হয়নি। দুই প্রার্থী ও এজেন্টরা কেউ উপস্থিত ছিল না। লটারির প্রক্রিয়া তাদের স্বাক্ষর নেয়ার নিয়ম থাকলেও কেউ স্বাক্ষর করেনি। আমি হারিনি। আমাকে হারানো হয়েছে। আমি আদালতের দ্বারস্থ হবো। এই লটারি আমি মানি না। আমাদের অনুপস্থিতে কোনো লটারি হতে পারে না। আমি প্রশ্নবিদ্ধ লটারির ফলাফল প্রত্যাক্ষান করেছি। অবিলম্বে এই ফলাফল বাতিল করার দাবী জানাচ্ছি।

রিফাইতপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পদে উপ-নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মান্নান রানা বিশ্বাস ৬ হাজার ১২৩ ভোট পেয়েছেন ও মোটরসাইকেল প্রতীকের প্রার্থী ফারুক আলম পান্না ৬ হাজার ১২৩ ভোট পেয়েছেন। দুই প্রার্থী সমান সংখ্যক ভোট পান। তারা দুইজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এই নির্বাচনে ৫ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করেন।

বিধিতে উল্লেখ আছে, যেক্ষেত্রে ফলাফল একত্রীকরণ বা ভোট গণনার পর দেখা যায় যে, দুই বা ততোধিক প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে ভোটের সংখ্যা সমান এবং অনুরূপ প্রার্থীর পক্ষে একটি ভোট যোগ হইলে, তিনি নির্বাচিত ঘোষিত হইবেন, সেইক্ষেত্রে রিটার্নিং অফিসার তৎক্ষণাৎ উক্তরূপ প্রার্থীগণের মধ্যে লটারি করিবেন এবং লটারির ফলাফল যে প্রার্থীর পক্ষে যাইবে তিনি সর্বোচ্চ ভোট প্রাপ্ত হইয়াছেন মর্মে গণ্য হইবে এবং বিজয়ী ঘোষিত হইবেন।

তবে শর্ত থাকে যে, উপস্থিত প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীগণ এবং তাহাদের নির্বাচনি এজেন্টগণের সম্মুখে লটারি করিতে হইবে, রিটার্নিং অফিসার লটারির প্রক্রিয়া লিখিতভাবে রেকর্ড করিবেন এবং উহাতে লটারির প্রক্রিয়া প্রত্যক্ষকারী প্রার্থী ও তাহাদের নির্বাচনি এজেন্টগণের স্বাক্ষর গ্রহণ করিবেন।

তবে শর্ত না মেনে, সমান ভোট পাওয়া দুই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাদের নির্বাচনী এজেন্টের অনুপস্থিতিতে লটারি করা হয়। এই লটারির পুরো কার্যক্রমটি কার্যবিবরণীতে লিপিবদ্ধ করেন। লিপিবদ্ধ কার্যবিবরণীতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাদের নির্বাচনী এজেন্টেদের সই নেয়া হয়নি।

জানা গেছে, শনিবার সন্ধ্যায় রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন। দুই প্রার্থী সমান ভোট পাওয়ায় কাউকে বিজয়ী ঘোষণা করেননি। তবে রাত সাড়ে ৯ টার দিকে জানানো হয় সমান ভোট পাওয়া দুই প্রার্থীর মধ্যে লটারি অনুষ্ঠিত হবে।

শনিবার রাতে জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার বলেন, নিয়ম অনুযায়ী সমান ভোট পাওয়ায় লটারি হবে। দুই প্রার্থী ও এজেন্টদের উপস্থিতিতে লটারি হবে।

পরে দুই প্রার্থীকে বিষয়টি জানানো হয়। তবে এ নিয়ে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। মোটরসাইকেল প্রতীকের ফারুক আলম পান্না রাত ১০টার দিকে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে উপজেলা নির্বাচন কার্যালয়ে যান। এসময় তিনি নির্বাচন কর্মকর্তাদের জানান, পুনরায় যাচাই-বাছাই করে ভোট গননা করা হোক। অথবা পরবর্তীতে দুই প্রার্থীর উপস্তিতিতে লটারি করা হোক। পরে সেখান থেকে ফারুক আলম পান্না চলে যায়। তবে সেখানে অপর প্রার্থী আবদুল মান্নান উপস্থিত হননি। পরে রাত দেড়টার দিকে দুই প্রার্থীর অনুপস্থিতিতে লটারি করা হয়। এতে আবদুল মান্নান বিশ্বাসকে চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন ইউএনও মো. ওবায়দুল্লাহ, জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার, ওসি রফিকুল ইসলাম প্রমুখ।

এবিষয়ে কথা বলার জন্য জেলা সিনিয়র নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু আনছার, রিটার্নিং কর্মকর্তা অঞ্জন কুমার মণ্ডল ও দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. ওবায়দুল্লাহ এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তারা রিসিভ করেন নি।

দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য মতে, রিফাইতপুর ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ বাবলু ২০২৩ সালের ১৪ অক্টোবর মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুতে চেয়ারম্যান পদটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে তফশিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।

এ ইউনিয়নে মোট ভোটার সংখ্যা ২৫ হাজার ৮৪৬জন। এ উপ-নির্বাচনে মোট পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। শনিবার নয়টি ভোটকেন্দ্রে ভোট দেন ১৭ হাজার ৯২৬ জন। এর মধ্যে বৈধ ভোট হয় ১৭ হাজার ৮১৩টি এবং ভোট বাতিল হয় ১১৩টি।

শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ ও বিরতিহীনভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়। এছাড়া অপর চেয়ারম্যান প্রার্থী আনারস প্রতীকে জামিরুল ইসলাম বাবু ৪ হাজার ৯১৩ ভোট পেয়েছেন, চশমা প্রতীকের প্রার্থী মেহেদী হাসান ৬৩৬ এবং টেবিল ফ্যান প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল মজিদ ১৮ ভোট পেয়েছেন।